“আমি ভাবতে পারছি না ভারতে আছি নাকি বাংলাদেশে”

আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় আসার কথা ছিল ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও সাবেক বোর্ড সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলীর। তবে ফ্লাইট জটিলতায় এসেছেন বিকেল সাড়ে

তিনটায় এই সাবেক ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার। বিমানবন্দরে ভারতের সাবেক এ অধিনায়ক ও তার স্ত্রী ডোনা গাঙ্গুলীকে উষ্ণ সংবর্ধনায় বরণ করে নেওয়া হয়। বিমান বন্দর থেকে সরাসরি রাজধানীর

একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র কাপের উদ্বোধন করেন এই সাবেক ক্রিকেটার। সৌরভের লক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে

আলাদা করে আলাপের সুযোগ হয়নি সৌরভের, তবে তার আগে বাংলাদেশ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন সৌরভ গাঙ্গুলী। গত ২০১৪ সালের পর বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততায় ঢাকায় আসা হয়নি

সাবেক বোর্ড সভাপতি সৌরভের। বলা যায় ৯ বছর পর ঢাকায় এসেছেন তিনি। বাংলাদেশে আসার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আমাকে এত বেশি ভালোবাসে,

তাতে আমি বরাবরই মুগ্ধ হই, বিমোহিত হই। আমি যতবার এখানে আসি, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় আমি বুঝতেই পারি না, আমি ভারতে আছি নাকি বাংলাদেশে আছি। আমাকে এত

ভালোবাসা, এত নিজের মনে করার জন্য আমার তরফ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও মেয়র কাপ হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মেয়র কাপ পশ্চিমবঙ্গেও হয়। আমরা ফুটবল

করি। ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সহায়তায় ক্রিকেট হয়। এখানে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবলসহ বিভিন্ন ধরনের খেলা মেয়র কাপের পরিচালনায় হয়ে থাকে।’ প্রথমবার

বাংলাদেশে আসার স্মৃতিচারণ করেছেন সৌরভ এভাবে, ‘আমার যতদূর মনে পড়ে, বাংলাদেশে আমি প্রথম আসি ১৯৮৯ সালে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে এশিয়া কাপ খেলতে এসেছিলাম। সেই

থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। প্রচুর মানুষ, বন্ধু আমার। ১০ বছর আমি বাংলাদেশে আসিনি। তবে তার সঙ্গে, তার পরিবারের সঙ্গে ও বাকি বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়ই আমার দেখা হতো

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে।’ ২০০০ সালে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচে প্রতিপক্ষ ভারতের অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ। প্রথমবার লাল বলের সংস্করণের অধিনায়কত্ব পেয়ে হারের ভয় জেগেছিল

তার মনে, ‘আমার প্রথম টেস্ট অধিনায়কত্ব বাংলাদেশের মাটিতে। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সঙ্গে আমার নাম সবসময় জড়িয়ে থাকবে। কারণ ওটা ছিল বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচ,

২০০১ সালে (আসলে ২০০০)। আর আমার প্রথম টেস্ট, ভারতের অধিনায়ক হিসেবে। আমার এখনো মনে আছে, তখনো নতুন স্টেডিয়াম হয়নি। পুরনো স্টেডিয়াম, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলা

হয়েছিল। বাংলাদেশ মনে হয় প্রথম ইনিংসে লিড নিয়েছিল। তারপর যখন ড্রেসিংরুমে ঢুকি, আমার মনে হলো, ‘এ কী! আমি অধিনায়ক হিসেবে আমার প্রথম ম্যাচ হেরে যাব!’ তারপর আমরা

ফিরে এসে টেস্ট ম্যাচটা জিতি।’ সৌরভ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকমুক্ত দেশ গড়ার চেষ্টা করছেন, সেটা সত্যিই অসাধারণ। এই যে বাংলাদেশের এত এত উন্নয়ন হয়েছে, তা

কিন্তু এই তরুণ প্রজন্মের জন্যই। তাই তাদের মাদক থেকে দূরে থেকে কাজ করতে হবে। শিক্ষা, গান বাজনা ও খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত থাকলে তরুণ প্রজন্ম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

মাদকমুক্ত তরুণ প্রজন্মের জন্য এসব খেলাধুলার দরকার আছে।’ ‘মাদক থেকে দূরে থাকি, খেলাধুলায় মেতে থাকি’ স্লোগানকে সামনে রেখেই মেয়র কাপ সিজন-৩ এর লোগো ও ট্রফি উন্মোচন

করা হয়। লোগো ও ট্রফি উন্মোচন করেন সৌরভ গাঙ্গুলী। পরে তার নাম সংবলিত তিনটি খেলোয়াড় জার্সি তুলে দেওয়া হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম

বলেন, ‘আমি যখন আমাদের অনুষ্ঠানের বিষয়টি সৌরভ গাঙ্গুলী দাদাকে বলি, তখন তিনি বলেন আমি আসব কিন্তু একটি টাকাও পারিশ্রমিক নেব না। সৌরভ গাঙ্গুলী মেয়র’স কাপ সিজন-৩

এ অংশগ্রহণ করায় আমরা আনন্দিত। আগামী প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’ মেয়র বলেন, ‘মাদকমুক্ত তরুণ প্রজন্ম গড়তে খেলাধুলার বিকল্প

নেই। আর সেই লক্ষ্যেই সৌরভ গাঙ্গুলী আমাদের অনুপ্রেরণা দিতে এসেছেন। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে সৌরভ গাঙ্গুলীর এই আগমন আমাদের সামনে এগিয়ে নিতে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ

করবে।’ লোগো ও ট্রফি উন্মোচনে আরও উপস্থিত ছিলেন—বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ইফতেখার রহমান মিঠু, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক

তরফদার মো. রুহুল আমিন, দারাজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোস্তাহিদল হকসহ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম খান, আতহার আলী খান, খালেদ মাসুদ

পাইলট, আকরাম খান ও মিনহাজুল আবেদিন নান্নুসহ অনেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *