তিন ফর্ম্যাট থেকেই বাদ পড়ছেন এই তারকা

ভারতীয় দলের অন্যতম তারকা ওপেনিং ব্যাটার কে এল রাহুল’কে নিয়ে দিন দিন বিতর্ক বেড়েই চলেছে। এই ক্রিকেটার নিয়ে বিতর্ক থামার কোনো নাম নিচ্ছে না। সাম্প্রতিক বর্ডার-গাওস্কর

ট্রফির প্রথম দুই টেস্টে জয় পেয়েছে ‘টিম ইন্ডিয়া।’ সিরিজের দুই টেস্ট নাগপুর আর দিল্লীতে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলা প্রায় নিশ্চিত করে

ফেলেছে দল। তবুও ‘মেন ইন ব্লু’র সাফল্যের চেয়েও রাহুলের ফর্ম নিয়ে আলোচনাই বেশী চলছে সমাজমাধ্যমের দেওয়ালে। বিষয় টা এমন যে আলোচনা না বলে সমালোচনা বলাই

অবশ্য সঠিক। দিনের পর দিন ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটেই ব্যাটিং ব্যর্থতাকে সঙ্গী হিসাবে পাশে পাচ্ছে এই ভারতীয় ব্যাটারকে। এই ব্যর্থতা করেও কি করে দলে টিকে রয়েছেন রাহুল? উঠছে

সেই প্রশ্ন। টেস্ট ক্রিকেটে শেষবার তিনি পঞ্চাশের গন্ডি পেরিয়েছিলেন গত বছরের গোড়ার দিকে। এরপর বারো মাস কেটে গেলেও উল্লেখযোগ্য একটী ইনিংসও আসে নি তাঁর ব্যাট থেকে।

৮,১২,১০,২২,২৩,১০,২,২০,১৭ এবং ১- এই হলো শেষ দশ ইনিংসে রাহুলের পারফর্ম্যান্সের খতিয়ান। ১২.৫০ ব্যাটিং গড়ে মাত্র ১২৫ রান করেছেন তিনি। সাদা বলের খেলাতেও পারফর্ম্যান্স

বিশেষ ভালো নয় তাঁর। কর্ণাটকের ওপেনারের অফ ফর্ম ভারতকে ভুগিয়েছে টি-২০ বিশ্বকাপে। বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজেও বাইশ গজে শান্তই থেকে গিয়েছে রাহুলের

ব্যাট। প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটারদের বাইরে রেখে কেবল অভিজ্ঞতার কারণে রাহুল’কে খেলানোর প্রয়োজনীয়তা জানতে চেয়ে সরব গোটা ক্রিকেটবিশ্ব। তাঁর উদ্দেশ্যে একের পর

এক সমালোচনার বোমাবর্ষণ করছেন প্রাক্তনীরা। সেখানে উলটো পথে হাঁটলেন দীনেশ কার্তিক । রাহুলের অবস্থাটা তিনি বোঝেন বলে জানাচ্ছেন ৩৭ বর্ষীয় উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। সমালোচনার

ঝড়ের মাঝেও রাহুলের পাশে দীনেশ কার্ত্তিক সাধারণ ক্রিকেট অনুরাগী থেকে বিশেষজ্ঞের দল, সকলেই একমত যে এবার ছেঁটে ফেলে হোক কে এল রাহুল’কে। অনেক হয়েছে, আর নয়।

ভারতীয় দলের মঙ্গলের জন্য কর্ণাটকের ওপেনারকে বিদায় জানানো অত্যন্ত প্রয়োজন। দিনকয়েক আগেই এক সুবিধাল ট্যুইটার থ্রেডে রাহুলের বিরুদ্ধে একের পর এক বোমা ফাটান প্রাক্তন পেসার

বেঙ্কটেশ প্রসাদ। তিনি জানান একমাত্র ‘পক্ষপাতিত্বের’ ফলেই দলে রয়েছেন রাহুল। তাঁকে প্রথম একাদশে দেখে ‘ন্যায়বিচারের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে যায়।’ এছাড়াও শিখর ধাওয়ান, মায়াঙ্ক

আগরওয়ালদের মত ব্যাটারদের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রসাদ দেখানর চেষ্টা করেছেন যে যোগ্যতর ব্যাটাররা বাইরে বসে থাকা সত্ত্বেও মাঠে জায়গা হচ্ছে সেই রাহুলের। এমনকি শুভমান গিল,

সরফরাজ খানদের মত তরুণ প্রতিভাদেরও বাইরে থাকতে হচ্ছে তাঁর জন্য। রাহুলের বিদায় চেয়ে সরব হয়েছেন কপিল দেবও। টিম কম্বিনেশনের সাথে কর্ণাটকের ওপেনার খাপ খাচ্ছেন না বলে

মন্তব্য করেন তিনি। তবে প্রসাদ বা কপিলের থেকে আলাদা অবস্থান নিয়েছেন দীনেশ কার্তিক । ক্রিকবাজ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাহুলের মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছেন তিনি। দিল্লী

টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে রাহুলের আউট হওয়ার ধরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “পেশাদারদের দুনিয়া এটা। খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে সবাইকেই যেতে হয়। কিন্তু একজন খেলোয়াড় হিসেবে

রাহুলের ওপর দিয়ে যা যাচ্ছে তা আমরা বোঝার চেষ্টা করতে পারি। এটা শেষ ইনিংস হতে পারে জেনেও যখন কেউ ঐভাবে আউট হয় তখন অনুভূতিটা ভালো হয় না। আমার সাথেও এমন হয়েছে

বারকয়েক। চুপচাপ টয়লেটে গিয়ে দু-এক ফোঁটা চোখের জল ফেলেছি। এর বেশী কিছু করার থাকে না।” রাহুল’কে তৃতীয় টেস্টে দেখছেন না কার্তিক- অন্যদের মত কড়া ভাষায় না হলেও তৃতীয়

টেস্টে রাহুলের বাদ পড়ার পক্ষেই সওয়াল করলেন কার্তিক। নিজের কোনো ভুলে নয়, বরং শর্ট লেগে দাঁড়ানো পিটার হ্যান্ডসকোম্বের তৎপরতায় দিল্লী টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট হারাতে

হয়েছিলো রাহুল’কে। তবে বাদ পড়ার পিছনে কেবল এক ইনিংসের ব্যর্থতা থাকতে পারে না বলে মত কার্তিকের। তিনি বলেছেন, “রাহুল জানে যে ও যদি পরবর্তী টেস্টে বাদ পড়ে, যেটা সম্ভবত

হতে চলেছে, তবে তা কেবল এক ইনিংসের জন্য নয়। শেষ পাঁচ-ছয় টেস্ট ম্যাচ ধরে যা চলছে তার জন্য। ও দুর্দান্ত প্লেয়ার। সব ফর্ম্যাটেই খুব ভালো। আমি মনে করি না ওর টেকনিকে কোনো সমস্যা

আছে। বরং পুরোটাই ওর মাথায় কি চলছে তার ওপর দাঁড়িয়ে। ক্রিকেট থেকে খানিক বিরতি হয়ত চাই ওর। তরতাজা হয়ে একদিনের ম্যাচে ফিরুক।” রাহুলের বদলি কে হবেন সেই বিষয়েও

খোলাখুলি মুখ খুলেছেন কার্তিক। তিনি জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে আমায় শুভমান গিলের সাথে যেতেই হবে। ও দারুণ ব্যাট করেছে। তৃতীয় টেস্টের জন্য ভারতীয় একাদশে একটিই মাত্র বদল

করবো। আমার কে এল্ রাহুলের জন্য খারাপ লাগছিলো। আতসকাঁচের নীচে রয়েছে ও। তবে ও যে দারুণভাবে ফিরে আসবে সেই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। আর যখন ছন্দে থাকে ওর মত প্রতিভাবান

আর শট বৈচিত্রসম্পন্ন ডান-হাতি ব্যাটার কমই দেখা যায়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *